Household & Commercial Water Purifier
Filtration Media & Chemicals
Pump & Blower
Accessories
By Brand
শহর বনাম গ্রামে পানির গুণগত মানের তুলনা
‘পানিই জীবন’— এই প্রাচীন বাক্যটির মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের মূল কথা। তবে এই জীবনদায়ী উপাদানটি যখন দূষিত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে নিঃশব্দ ঘাতক। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে পানির গুণগত মান এখন শুধুই পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আলোচনার বিষয় নয়; এটি হয়ে উঠেছে জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় সংকট। আর এই সংকট শহর ও গ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব শহর ও গ্রামাঞ্চলের পানির গুণগত মান— পরীক্ষিত উপাত্ত, গবেষণার তথ্য, এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে আঁকা হবে এক জলছবি, যেখানে ধরা পড়বে সুপেয় পানির প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য।
১. পানির উৎস : পটভূমির ব্যবধান
শহর :
শহরাঞ্চলে পানির প্রধান উৎস হচ্ছে ভূগর্ভস্থ নলকূপ (deep tube well), যা সাধারণত পানির স্তর থেকে ২০০–২৫০ ফুট নিচে বসানো হয়। এছাড়া ওয়াসা (WASA) সরবরাহ করে বিশুদ্ধকৃত পানি, যার প্রক্রিয়ায় থাকে ক্লোরিনেশন, আয়রন রিমুভাল ও ব্যাকটেরিয়া ফিল্ট্রেশন। ঢাকা শহরে দৈনিক প্রায় ২৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে ওয়াসা (সূত্র: ঢাকা ওয়াসা, ২০২৪)।
গ্রাম :
গ্রামাঞ্চলে পানির উৎস মূলতভাবে অগভীর নলকূপ (shallow tube well), খাল, পুকুর, ও কখনও কখনও নদী। এখানে ফিল্ট্রেশনের ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত এবং গভীর নলকূপের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে পানির মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে মৌসুমি বৃষ্টিপাত, সেচ ব্যবস্থার উপস্থিতি ও জনসচেতনতায়।
২. রাসায়নিক দূষণ : নিঃশব্দ মরণ
আর্সেনিক :
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আর্সেনিক দূষণ একটি ভয়াবহ বাস্তবতা। ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬০টির বেশি জেলায় আর্সেনিক মাত্রা WHO নির্ধারিত ১০ μg/L সীমার চেয়ে অনেক বেশি। গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ১.৪ কোটি মানুষ আর্সেনিক দূষিত পানি পান করছে (সূত্র: UNICEF, ২০২৩)।
শহরে :
শহরে আর্সেনিক সমস্যা তুলনামূলক কম, কারণ পানি গভীর স্তর থেকে উত্তোলন করা হয়। তবে লেড (lead) ও ক্লোরিনের উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক। পুরোনো পাইপলাইনের কারণে সীসা মিশ্রণ অনেক জায়গায় পানিতে ধরা পড়ে। ঢাকায় ২০২১ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু এলাকার পানিতে লেডের পরিমাণ ২০ ppb ছাড়িয়ে গেছে, যা WHO মানদণ্ডের চেয়ে দ্বিগুণ।
৩. ব্যাকটেরিয়াল দূষণ : অদৃশ্য হুমকি
গ্রামাঞ্চলে পানির প্রধান সমস্যা ব্যাকটেরিয়াল দূষণ— বিশেষত কলেরা, টাইফয়েড ও ডায়রিয়ার জীবাণু। সংরক্ষণ ব্যবস্থার ঘাটতি, পশুসম্পদের সন্নিকটে নলকূপ, ও সচেতনতাহীনতা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
অন্যদিকে, শহরে পানি সরবরাহের সময় ফাটল ধরা পাইপলাইন দিয়ে নর্দমার পানি প্রবেশ করে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ওয়াসা লাইনের পানিতে E.Coli ব্যাকটেরিয়া পাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা।
৪. স্বাদ ও গন্ধ : ব্যবহারের অনুভূতি
শহরের পানি অনেক ক্ষেত্রে ক্লোরিনযুক্ত, যার কারণে এক ধরনের তীব্র গন্ধ অনুভব হয়। আবার বেশি আয়রন থাকলে পানির স্বাদ হয় লৌহঘটিত। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। অপরদিকে, গ্রামের অনেক এলাকায় পানি বিশুদ্ধ না হলেও তুলনামূলকভাবে স্বাদ ও গন্ধে কম বিরক্তিকর। তবে বৃষ্টির মৌসুমে খোলা উৎসগুলোতে পচা গন্ধ ও রং পরিবর্তনের সমস্যা দেখা দেয়।
৫. প্রযুক্তির প্রবেশ : গ্রামে অনুপস্থিত, শহরে ধীরগতি
RO (Reverse Osmosis), UV ও UF প্রযুক্তি এখন ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্ট ওয়াটার পিউরিফায়ার এখন শুধু বিশুদ্ধ নয়, স্মার্টও করছে পানিকে— TDS কন্ট্রোল, আয়ন ব্যালেন্স ও খনিজ সংরক্ষণকারী প্রযুক্তি শহরের মানুষকে সচেতন করছে।
গ্রামে এসব প্রযুক্তি প্রায় অনুপস্থিত। এখানে এখনো বেশিরভাগ পরিবার নলকূপ থেকে পানি পান করে এবং ফিল্টার ব্যবহার খুবই সীমিত। মূলত দারিদ্র্য, অবহেলা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতাই প্রযুক্তির প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে।
৬. স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনসচেতনতা
গ্রামে পানির দূষণজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ (সূত্র : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ২০২৩)। বিশেষ করে ৫ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, জন্ডিস ও কৃমিজনিত রোগ অত্যন্ত সাধারণ।
শহরে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সচেতনতা থাকলেও, তা সঠিক তথ্য বা ব্যাখ্যার অভাবে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে। অনেকেই শুধু ব্র্যান্ডের ওপর ভিত্তি করে পিউরিফায়ার ব্যবহার করে থাকেন, যা সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে।
৭. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন আধুনিক জলপ্রকৌশল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। তবে পুরোনো অবকাঠামো ও দুর্নীতির কারণে এসব উদ্যোগের কার্যকারিতা প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ।
গ্রামে :
UNICEF, BRAC ও Green Dot Ltd.-এর মতো সংস্থাগুলো গ্রামের জন্য স্বল্পমূল্যের পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার সরবরাহ করছে। তবে এটি এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
৮. ভবিষ্যতের দৃষ্টিপথ
এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হলে চাই তিনটি বিষয় :
১. সহজলভ্য প্রযুক্তি,
২. জ্ঞানভিত্তিক সচেতনতা,
৩. সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রয়াস।
Water
Water Filter
What kind of water is safe for children?
ঢাকার পানি কি সত্যিই পানযোগ্য?
বাচ্চাদের পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষায় মা-বাবার করণীয়