গরমে হাইড্রেশন ও পানি গ্রহণের গুরুত্ব.jpg

সূর্য যখন দিগন্তে জ্বলে ওঠে

পুবের আকাশে যখন খরতাপ নেমে আসে, তখন শরীর যেমন ক্লান্ত হয়, তেমনই প্রাণও চায় একটু প্রশান্তির পরশএক গ্লাস ঠান্ডা পানি যেনো হয়ে ওঠে নতুন প্রাণ সঞ্চারের সমান। আমাদের শরীর যখন ক্রমাগত ঘাম ঝরায়, তখন সেসঙ্গে হারায় প্রয়োজনীয় পানি ও লবণ। এই ঘাটতি পূরণ না হলে শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যাডিহাইড্রেশন, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এমনকি হিটস্ট্রোক। আর তাই এই সময়, হাইড্রেশন শব্দটি শুধু চিকিৎসাবিদ্যার অংশ না হয়ে, হয়ে ওঠে প্রতিটি সচেতন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অমোঘ অংশ।

 

কেন পানি পান জরুরি গরমে?

পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সহায়তা করে, ত্বক সতেজ রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন নির্গত করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ অনেকের কাছেই পরিচিত শোনালেও, বাস্তবে আমরা অনেকেই তা মেনে চলি না।

 

তবে মনে রাখা দরকার, এই পরিমাণ পানি পান আমাদের জন্য আবশ্যিক, প্রয়োজন ক্ষেত্রে আরো বেশি। বিশেষ করে যারা বাইরে কাজ করেন, ঘাম বেশি ঝরান, কিংবা খেলাধুলা বা ব্যায়ামে সক্রিয়তাদের জন্য পানি হলো বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী।

 

পানির ঘাটতি হলে কী হয়?

ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলোচোখে ঝাপসা দেখা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়া, মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা অনুভব করা। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো আরও দ্রুত দেখা দিতে পারে এবং ভয়ানক রূপ নিতে পারে।

 

এজন্য, গরমের দিন বা অন্যান্য ঋতুতে, যদি শরীরের প্রয়োজনীয় পানি পূরণ না হয়, তবে তা শুধু শারীরিক দুর্বলতাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। মন মেজাজ হারায়, একাগ্রতা নষ্ট হয়, এমনকি উদ্বেগও বাড়তে পারে।

 

কেবল পানি নয়, বেছে নিন সঠিক পানীয়

শরীরের চাহিদা পূরণে বিশুদ্ধ পানি হলো সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর মাধ্যম। তবে আপনি চাইলে মাঝে মাঝে শরবত, ডাবের পানি বা তাজা ফলের জুস দিয়ে পানির ঘাটতি মেটাতে পারেন। কিন্তু সচেতন থাকতে হবে যে, কোলা বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এক্ষেত্রে পান করা যাবে না। কারণ ওগুলো শরীর থেকে আরো পানি নির্গত করে দেয়।

এজন্য, চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুতে। এটি হজমে সহায়তা করে এবং সারাদিন পানি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলে।

 

পানি পানের স্মার্ট অভ্যাস গড়ে তুলুন

আমরা সকলেই জানি পানি জীবন, কিন্তু ব্যস্ততায় ভুলে যাই এই সহজ সত্যটি। তাই গড়ে তুলুন কিছু স্মার্ট অভ্যাস

·        নিজের কাছে সবসময় একটি পানি ভর্তি বোতল রাখুন

·        স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার দিন প্রতি ঘণ্টায় পানি পানের

·        খাওয়ার আগে ও পরে অন্তত আধা গ্লাস পানি পান করুন

·        বাইরের খাবারের সঙ্গে সোডা নয়, পানি বেছে নিন

 

জীবন যেখানে জলের ঋণে বাঁধা

জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে যে প্রভাব ফেলে, সেই পানি নিয়ে আমাদের ভাবনার সময় এখনই। আর এজন্য, হাইড্রেশন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এক নিঃশর্ত চুক্তিনিজের শরীর, মন এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে। পানি আমাদের রক্তের মতোই প্রবাহিত হয় জীবনের প্রতিটি কোষে। এই প্রবাহ যেন কখনো বাধা না পায়। কারণ সুস্থ জীবন শুরু হয় এক গ্লাস পানি থেকেই।

Share